জমিদার যদুনাথ রায়ের বাড়ি ( ভাগ্যকূল জমিদার বাড়ি)
![]() |
ভাগ্যকুল জমিদার বাড়ি |
জমিদার যদুনাথ সাহা আনুমানিক ১৯২০ সালে প্রায় ৫০০ শতাংশ জমির ওপর মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার ভাগ্যকুল গ্রামে ভাগ্যকুল জমিদার বাড়ি নির্মাণ করেন। জমিদার শ্রীনাথ রায়ের পুত্র এই যদুনাথ রায় চৌধুরি ৷ স্থানীয় মানুষের কাছে এটি বাবু বাড়ি নামেও পরিচিত।
গঙ্গাপ্রসাদ রায়ের ৪র্থ ও কণিষ্ঠ পুত্র প্রেমচাঁদ রায়ের তিনপুত্র ছিলেন অত্যন্ত প্রভাবশালী জমিদার। এদের মধ্যে শ্রীনাথ রায় এবং জানকী নাথ রায় ইংরেজ সরকার কর্তৃক রাজা উপাধি দ্বারা ভূষিত হন। এই দুইজন ভাগ্যকুলে প্রাসাদ নির্মাণ করে বসতি স্থাপন করেছিলেন। তাদের প্রাসাদও প্রায় ৩০ বছর পূর্বে কৃত্তিনাশা পদ্মার গর্ভে বিলীন হয়েছে। রাজা শ্রীনাথ রায় ছিলেন ভাগ্যকুলের জমিদারদের মধ্যে সর্বশেষ্ঠ। রাজা সীতানাথ রায়ের দুই পুত্র যদুনাথ রায় এবং প্রিয়নাথ রায়। যদুনাথ রায় বর্তমানের বাড়িখাল ইউনিয়নের উত্তর বালাশুরে (সে সময় ভাগ্যকুল নামে পরিচিত ছিল) হুবহু একই ধরণের দুটি ত্রিতল ভবন নির্মাণ করেন। বিশালাকৃতির দিঘি খনন করেন, নাট মন্দির ও দূর্গামন্দির স্থাপন করেন।
![]() |
জরাজীর্ণ প্রাসাদ |
দেখা যাবে কাচারিঘর, দুর্গামন্দির, লক্ষ্মীমন্দির ও বিভিন্ন প্রজাতির দুর্লভ সব ফুল ও ফলদ গাছগাছালি। এক সময় বাড়িটিতে পূর্ণিমা তিথিতে খুব ঘটা করে পালন হতো রাশ উৎসব। বাড়িটির চারপাশ এক সময় রাতের আঁধারে আলোয় ঝলমল করত।
প্রথাবিরোধী লেখক ভাষা বিজ্ঞানী ড. হুমায়ূন আজাদ তার লেখা এক প্রবন্ধে বাড়িটিকে প্যারিস শহরের সাথে তুলনা করে লিখেছেন বিলের ধারে প্যারিস শহর।
সাহিত্যিক নূর উল হোসেন তার বহু লেখায় ভাগ্যকুলের জমিদার বাড়ির জাকজমকপূর্ণ উৎসবের বর্ণনা দিয়েছেন। ভাগ্যকুলের স্টীমার ঘাটও সুপরিচিত ছিল জমিদারদের কারণেই।জমিদারগণ শুধু শিক্ষানুরাগীই ছিলেন না, তারা প্রায় সকলেই ছিলেন উচ্চ শিক্ষিত। ঢাকা, কলকাতা এবং ইংল্যান্ডে তার পড়াশোনা করেন। ভাগ্যকুলের জমিদারদের সকলেরই কলকাতায় বাড়ি ছিল। তারা ধীরে ধীরে সম্পূর্ণ কলকাতামুখী হয়ে পড়েছিলেন। ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত শুধুমাত্র যদুনাথ রায় তার বিলের ধারের প্রাসাদে ছিলেন। তিনি ভাগ্যকুল ত্যাগ করতে চাননি। বৃদ্ধ বয়সে তার আত্মীয়-স্বজনরা জোর করে কলকাতায় নিয়ে যায়। তিনি কলকাতায় গিয়ে অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই মৃত্যুবরণ করেন।
ভাগ্যকুল জমিদার বাড়ির দরজা ও জানালাগুলো একই আকারের ফলে বদ্ধ অবস্থায় দরজা-জানালার অনুমান করা বেশ কঠিন। বাড়ীর সমস্ত জায়গা জুড়ে নির্মাণ করা হয়েছে মূল ভবন, আর তার মাঝখানে উঠোনের অবস্থান।
বাড়িগুলো স্থানীয় মানুষের কাছে কোকিলপেয়ারি জমিদার বাড়ী, উকিল বাড়ী, জজ বাড়ী এবং ভাগ্যকুল জমিদার বাড়ি নামে পরিচিটি লাভ করে। তবে বান্দুরায় অবস্থিত ভাগ্যকুল জমিদার বাড়িটি (ডানপাশের ছবিতে) বর্তমানে অপেক্ষাকৃত ভাল অবস্থায় রয়েছে।
সবুজ গাছ-গাছালিতে ঢাকা। সকাল-সন্ধ্যায় পাখিদের কিচিরমিচির আওয়াজ। তার মাঝে বিশাল বিশাল পুকুর। পুকুরের চারপাশেই শ্বেতপাথরে নির্মাণ করা শানবাঁধানো ঘাট।
ঘাটের চারপাশের সিঁড়িগুলো পুকুরের মাঝখানে এসে একত্রে মিলিত হয়েছে। পুকুরগুলো খুব গভীর, যার কারণে সব সময়ই থাকে অথৈ পানি।
![]() |
বিক্রমপুর জাদুঘর |
জমিদার যদুনাথ রায়ের বাড়িটির স্মৃতি রক্ষার্থে প্রায় সাড়ে ১৩ একর জায়গাজুড়ে গড়ে তোলা হয়েছে বিক্রমপুর জাদুঘর। অগ্রসর বিক্রমপুর ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ও সরকারি অর্থায়নে নির্মাণ করা হয়েছে জাদুঘর, গেস্ট হাউস।
করোনাকালীন সাময়িক বন্ধ রাখা হলেও এরই মধ্যে দর্শনার্থীর জন্য খোলা হয়েছে বিক্রমপুর জাদুঘরটি। জাদুঘরের প্রথম তলায় দুটি গ্যালারি করা হয়েছে।
গ্যালারি দুটির নামকরণ করা হয়েছে জমিদার যদুনাথ রায় ও বিজ্ঞানী স্যার জগদীশ চন্দ্র বসুর নামে। দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় করা হয়েছে মুক্তিযোদ্ধাসহ অন্যান্য গ্যালারি।
কিভাবে যাবেন?
ঢাকা থেকে নবাবগঞ্জ হয়ে বান্দুরা যাত্রাপথের দূরত্ব ৩৫ কিলোমিটার। গুলিস্তান হতে ঢাকা-দোহার রুটের গরিবে নেওয়াজ, মহানগর, আরাম, ভাগ্যকূল কিংবা সেবা পরিবহনের বাসে বালাসুর বাজার এসে সেখান থেকে রিকশায় চড়ে ভাগ্যকুল জমিদার বাড়ি যাওয়া যায়।
প্রিয় পাঠক, আপনাদের জন্য ভাগ্যকূল জমিদার বাড়ির আরো কিছু ছবি নিচে জুড়ে দেয়া হলো...
ইন্সটাগ্রাম :
আমার ফেসবুক পেজ -
ইউটিউব চ্যানেল-
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন